ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

স্বাধীন-নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি হোক

দৈনিক মার্তৃভূমির খবর
আপলোড সময় : ২৮-০৭-২০২৪ ১১:২৬:৩২ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ২৮-০৭-২০২৪ ১১:২৬:৩২ পূর্বাহ্ন
স্বাধীন-নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি হোক
দেশব্যাপী সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে একটা সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এতে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে পড়ে যে সরকারকে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করতে হয়েছে।

কারফিউ কিছুটা শিথিল হলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তবে সরকার পর্যায়ক্রমে কারফিউ তুলে নিচ্ছে এবং আজ রোববার থেকে অফিস–আদালত নিয়মিতভাবে চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সেই সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থাও পুরোপুরি সচল হবে আশা করা যায়।

কিন্তু হতাহত ও হামলার ঘটনার তদন্ত ও বিচার নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ন্যায়বিচারের জন্য যেকোনো ঘটনার সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত প্রয়োজন। ইতিমধ্যে সরকার বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সেটি হত্যার বিচারে খুব একটা সহায়ক হবে না। ইনকোয়ারি অ্যাক্ট-১৯৫২-এর অধীনে গঠিত এই কমিশন সমস্যার কারণ খুঁজে বের করবে এবং এর সমাধানে একটা সুপারিশ করবে। তদুপরি এই কমিশন সহিংসতার প্রথম দিনে সংঘটিত ছয়টি হত্যার বিষয়ে তদন্ত করবে বলে জানানো হয়েছে। বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড হয়েছে দিলীরুজ্জামান কমিশন গঠনের পর। পরের ঘটনাবলি তাদের কার্যক্রমে আসবে কি না, সেটা পরিষ্কার নয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যদিও বলেছেন, প্রতিটি হত্যার তদন্ত করবে কমিশন।

হত্যা ও নাশকতার সুষ্ঠু বিচার হতে হলে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা যে আট দফা দাবি পেশ করেছেন, তার মধ্যে হত্যার ঘটনাগুলো তদন্তের কথাও আছে। সরকারের মন্ত্রীরাও প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার কথা বলেছেন। এর পাশাপাশি তাঁরা অনেক রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংসের জন্য বিরোধীদের দায়ী করছেন। এ বিষয়ে তঁাদের হাতে তথ্যপ্রমাণ থাকলে সেটাও জাতির সামনে প্রকাশ করা উচিত। এরপর আলামত ধরে অপরাধী চিহ্নিত করা যেতে পারে।

আরেকটি প্রশ্ন, ক্ষমতাসীনদের দাবি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা যদি নাশকতায় জড়িত না হয়ে থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন একের পর এক মামলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এ ছাড়া সারা দেশে সহিংসতায় কত লোক মারা গেছেন, সে সম্পর্কে এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। ফলে জনমনে সংশয় দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। নিহতদের অনেকেরই ময়নাতদন্ত হয়নি। কিন্তু ময়নাতদন্ত ছাড়া কোনো হত্যার বিচার সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে।

সংবাদমাধ্যমের তথ্য বা সে সময়কার ভিডিওতে এটা অনেকটাই স্পষ্ট যে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের সরাসরি গুলিতে মারা গেছেন। অথচ পুলিশের এফআইআরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন দিক থেকে গুলি ছুড়তে থাকে এবং ইটের টুকরা নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে এক শিক্ষার্থীকে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখা গেছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে এই ধারায় তদন্ত ও মামলা চলতে থাকলে মানুষ কীভাবে ভরসা রাখবে। যেখানে পুলিশ অভিযুক্ত, সেখানে পুলিশের দ্বারা গঠিত তদন্ত কমিটি কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সে বিষয়েও সন্দেহ আছে। এ কারণেই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের যে দাবি উঠেছে, তা বিবেচনায় নিতে হবে। বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ